বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

লেকচার-৩ (ব্রিটিশ শাসন আমলঃ অংশ ১)

কোর্স সমন্বয়কারীঃ
মোঃ মামুন চৌধুরী




ইউরোপীয়দের আগমণঃ ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে এ অঞ্চলের আরব বণিকদের ব্যবসা বাণিজ্য ছিল একচেটিয়া। তারা বাণিজ্য করত সমুদ্রপথে। ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে কন্সস্টান্টিপোল অটোমন তুর্কীরা দখল করে নেয়।

পুর্তগীজঃ পর্তুগীজদের মধ্যে যে দুঃসাহসী নাবিক প্রথম সমুদ্রপথে এদেশে আসেন তার নাম ভাস্কো-ডা-গামা। তিনি ১৪৯৮ খ্রীস্টাব্দে ২৭ মে ভারতের পশ্চিম-উপকূলের কালিকট বন্দরে এসে উপস্থিত হন। ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তারা চট্রগ্রাম ও সাতগাঁয়ে শুল্কঘাটি নির্মাণের অনুমতি লাভ করে। ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে হুগলী নামক স্থানে তারা উপনিবেশ গড়ে তোলে।

ওলন্দাজ বা ডাচঃ হল্যান্ডের অধিবাসী ওলন্দাজ বা ডাচরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে উপমহাদেশে আসে। ওলন্দাজ ও অপর ইউরোপীয় শক্তি ইংরেজদের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ শুরু হয় এবং একই সঙ্গে বাংলার শাসকদের সঙ্গে তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত বিদারার যুদ্ধে তারা ইংরেজদের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাচিত হয়। ফলে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে তারা সকল বাণিজ্য কেন্দ্র গুটিয়ে ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। প্রথমে পুর্তগীজ পরে ওলন্দাজ শক্তির পতন, ভারতে ইংরেজ শক্তির উত্থান পথ সুগম করে।

দিনোমারঃ দিনোমার বা ডেনমার্কের অধিবাসী একদল বণিজ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে তারা দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর জেলার ত্রিবাংকুর এবং ১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার শ্রীরামপুরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের কাছচে বাণিজ্য কুঠি বিক্রি করে এবং কোনও রকম বাণিজ্যিক সফলতা ছাড়াই এদেশ ত্যাগ করে। 

ইংরেজঃ ইউরোপীয়ানদের বণিকদের সাফল্যে, প্রাচ্যের ধন-সম্পদের প্রাচুর্য, ইংরজে বণিকদেরকেও অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের উৎসাহিত করে। এই উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের একদল বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে একটি বণিক সংঘ করে। বণিক সঙ্ঘটি ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে রাণি এলিজাবেথের কাছে ১৫ বছর মেয়াদি প্রাচ্যে একচেটিয়া ব্যবসা করার সনদ লাভ করে। এরপর ক্যাপ্টেন হকিন্স ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে জেমসের সুপারিশপত্র নিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণ লক্ষ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট সাক্ষাত করেন। তার অনুমতি নিয়ে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রম জেমসের দূত হয়ে জাহাঙ্গিরের দরবারে আসেন স্যার টমাস রো। সম্রাটের কাছে থেকে তিনি ইংরেজদের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নেন। ১৬১৯ খ্রিঃ তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন।  কোম্পানি তার দ্বিতীয় বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে মসলিমপট্রমে। এরপর বাংলার বালাসোর আরেকটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এদের শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলে এরা করমন্ডল (মাদ্রাসা শহর) উপকূলে একটি দূর্গ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। বাংলার সুবেদার শাহ সুজার অনুমোদন লাভ করে তারা ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এভাবে কোম্পানি কাশিমবাজার, ঢাকা, মালদহেও বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। 

১৬৬৮ খ্রিঃ ইংল্যান্ড রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথরিনের সঙ্গে বিয়ের যৌতুক হিসেবে লাভ করেন বোম্বাই শহর। অর্থাভাবে চার্লস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে শহরটি বিক্রি করেন। পরবর্তীকালে এই বোম্বাই শহর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। 
জব চার্ণক নামে আরেকজন ইংরেজ ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে ১২০০ টাকার বিনিময়ে কোলকাতা, সুলতানটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারীসত্ব লাভ করেন। এখানেই ১৭০০ খ্রিঃ ইংল্যান্ডের তৃতীয় উইলিয়ামের নাম অনুসারে ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ নির্মাণ করে। ইংরেজ কোম্পানির ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায় যখন দিল্লীর সম্রাট ফারুখশিয়ার তাদের বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিনা শুল্কের বাণিজ্যের অধিকার প্রদান করেন। একই সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রা প্রচলনের অধিকারও কোম্পানি লাভ করে। সম্রাটের এই ফরমানকে ইংরেজ ঐতিহাসিক ওরমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মহাসনদ বা ম্যাগনা কার্টা বলে উল্লেখ করেন।

ফরাসীঃ উপমহাদেশে আগত ইউরোপীয় বণিক কোম্পানি হচ্ছে ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে এই বাণিজ্যিক কোম্পানি গঠিত হয়। ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি সর্বপ্রথম সুরাট এবং পরের বছর মুসলিমপট্রমে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরীতে ফরাসী উপনিবেশ গড়ে উঠে। ১৬৭৪ খ্রিঃ পর তারা তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৬৯০ থেকে ১৬৯২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চন্দননগর একটি শক্তিশালী সুরক্ষিত ফরাসী বাণিজ্য কুঠিতে পরিণত হয়। ১৬৯৬ খ্রিঃ কোম্পানি এখানে একটি শক্তিশালো দূর্গ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। ১৬৯৩ সালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। ইংরেজ বণিকরা যখন এদেশে ব্যবসা বাণিজ্যে দৃঢ় অবস্থানে তখন ফরাসীরা আসে। তাই ইংরেজদের সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।

পলাশী যুদ্ধঃ ১৭৪০-১৭৫৬ সাল পর্যন্ত বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন নবাব আলীবর্দী খান। নবাবের মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠা কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলা কে তার উত্তরাধিকার হিসেবে সিংহাসনে মনোনিত করেন। ১৭৫৬ সালে নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু হলে তার প্রিয় দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা ২২ বছর বয়সে নবাবের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৭৫৬ খ্রিঃ জুনমাসে নবাব ইংরেজদের ঔদ্ধ্বত্যপূর্ণ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে কোলকাতা দখল করেন। যাত্রাপথে তিনি কাশিমবাজার কুঠিও দখল করেন। নবাবের অতর্কিত আক্রমণে ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ ত্যাগ করে পালিয়া যায়। হলওয়েলসহ বেশ কিছু ইংরেজ আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বন্দিদশা থেকে  মুক্তি পেয়ে নবাবকে হেয় করার জন্য হলওয়েল এক মিথ্যা কাহিনীর অবতারণা করেন যা ইতিহাসে অন্ধকূপ হত্যা নামে পরিচিত। এতে বলা হয়যে, ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪.১০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট একটি ছোট ঘরে ১৪৬ জন ইংরেজকে বন্দি করে রখা হয়। এতে প্রচন্ড গরমে শ্বাসরোধ হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এখবর শুনে ওয়াটসন ও ক্লাইভ মাদ্রাজ থেকে কলকাতা চলে আসে। তারা নবাবের সেনাপতি মানিকচাঁদকে পরাজিত করে কোলকাতা দখল নেয়। নবাব চারিদিকে ষড়যন্ত্র ও শত্রু পরিবেষ্টিত টের প্যে ইংরেজদের সঙ্গে নতজানু ও অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হয় যা আলীনগর সন্ধি নামে পরিচিত। এ সন্ধির পর ক্লাইভের উচ্চাকাংখা আরও বৃদ্ধি পায়। নবাবের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা চন্দন নগর কুঠি দখল করে নেয়। নবাব এই অবস্থা দেখে ফরাসীদের সাথে মৈত্রী চুক্তি করে ইংরেজদের শায়েস্তা করার জন্য। এতে ক্লাইভ ক্ষুব্ধ হয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন আর এই ষড়যন্ত্রে আরো লিপ্ত হন ব্যবসায়ী ধনকুবের জগতশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভের সেনাপতি মীরজাফর সহ প্রমুখ।   

১৭৫৭ খ্রিঃ ২৩ জুন ভগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইতোমধ্যে রবার্ট ক্লাইভ তার অবস্থান সুদৃঢ় করে সন্ধিভঙ্গের আজুহাতে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নবাবের পক্ষে দেশপ্রেমিক মীরমদন, মোহনলাল এবং ফরাসী সেনাপতি সিন ফ্রে প্রাণপন যুদ্ধ করে। নবাবের বিজয় আসন্ন দেখে মীরজাফর ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে যুদ্ধ থামিয়ে দেয় এবং বিশ্রাম নিতে যাওয়া সৈন্যদের উপর ইংরেজ সৈন্যরা ঝাপিয়ে পড়ে। নবাবের পরাজয় হয়। শেষ হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের শাসন অধ্যায়কাল।

বক্সারের যুদ্ধঃ ইংরেজী বণিক কোম্পানি মীর জাফরকে যে উদ্দেশ্যে সিংহাসনে বসিয়েছিল সে উদ্দেশ্য সফল হয় নি। নতুন নবাব কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয় দেউলিয়া হয়ে পড়ে। নিজের ক্ষমতা রক্ষা করতেও তাকে বার বার ক্লাইভের উপর নির্ভর করতে হয়। আবার ক্লাইভের ঘন ঘন হস্তক্ষেপে নবাবের পছন্দ ফহিল না। ইংরেজদের বিতাড়নের জন্য মীর জাফর আরেক বিদেশি কোম্পানি ওলন্দাজদের সাথে আঁতাত করে। বিষয়টি ইংরেজদের দৃষ্টিগোচর হয়। মীরজাফরের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা, অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের অক্ষমতা এবং ওলন্দাজদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ১৭৬০ খ্রিঃ ইংরেজ গভর্নর ভন্সিটার্ট মীরজাফরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মীর কাশিমকে শর্ত সাপেক্ষে সিংহাসনে বসান। মীরকাশিমকে স্বাধীন নবাব হিসেবে টিকে থাকার ইচ্ছার কারণে মূলত বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

কিন্তু ইংরেজরা মীর জাফরকে পুনরায় বাংলার সিংহাসনে বসায়। মীর কাশিম পরাজিত হয়েও হতাশ হননি। নবাব ইংরেজদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ১৭৬৪ সালে বিহারের বক্সারের নামক স্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চরম শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। মীর কাশিমের পরাজয়ের পর বাংলার সার্বভৌমত্ব উদ্ধারের শেষ চেস্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

কোম্পানির দেওয়ানী লাভঃ ১৭৬৫ খ্রীঃ মীর জাফরের মৃত্যুর পর তার পুত্র নামিজ-উদ-দৌলাকে শর্ত সাপেক্ষে বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়। ইংরেজরা তাকে শর্ত দেন ইংরেজরা অবাধে পুরোদস্তর পুরাতন নিয়মে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করবে এবং দেশিয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্য বাতিল করবে। বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজদের শাসন পথ সুগম হয়। এ সময় ইংরেজ কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার রাজস্ব আদায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অর্থাৎ দেওয়ানী লাভ করে। ১৭৬৫ খ্রিঃ দেওয়ানি লাভের পর প্রকৃতপক্ষে ইংরেজরাই বাংলার সত্যিকারের শাসকরূপে আত্নপ্রকাশ করে।

দ্বৈত শাসনঃ রবার্ট ক্লাইভ দেওয়ানী সনদের নামে বাংলার সম্পদ লুন্ঠনের একচেটিয়া ক্ষমতা লাভ করে। দিল্লী কতৃক বিদেশী বণিক কোম্পানিকে এই অভাবিত ক্ষমতার সৃষ্টি হয় দ্বৈত শাসনের। অর্থাৎ যাতে করে কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা, নবাব পরিণত হয় ক্ষমতাহীন শাসকে। অথচ নবাবের দায়িত্ব থেকে যায় ষোলআনা। ফলে বাংলায় এক অভূতপূর্ব প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। যার চরম মাশুল দিতে হয় এ দেশের জনগোষ্ঠীকে। ১৭৭০ খ্রিঃ (১১৭৬ বঙ্গাব্দে ) গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যা স্মরণকালের ইতিহাসের ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। 
১৭৬৫-৭০ খ্রিঃ বাৎসরিক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যা ছিল, দূর্ভিক্ষের বছরও আদায় প্রায় তার কাছাকাছি। ১৭৭২ খ্রিঃ ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটান।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তঃ লর্ড কর্ণওয়ালিসকে কোম্পানির শাসন ও দুর্নীতিমুক্ত ও সুসংঘটিত করতে ১৭৮৬ খ্রিঃ ভারতের গভর্নর জেনারেল ও সেনা প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তিনি ১৭৯৩ খ্রিঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা স্থায়ী ভূমি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনঃ বাংলায় ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন ছিল বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন। মীরকাশিমের সহযোগী হিসেবে ফকির সন্ন্যাসীরা যুদ্ধ করে। কিন্তু মীর কাশিমের পরাজয়ের পর ইংরেজদের কড়া নজরে থাকে ফকির-সন্ন্যাসীরা। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ শুরু করে।  ১৭৭১ সালে মজনু শাহ সারা উত্তর বাংলায় ইংরেজবিরোধী তৎপরতা শুরু করেন। ১৭৭৭ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও ময়মন সিংহ জেলায় ইংরেজদের সঙ্গে মজনু শাহ বহু সঙ্ঘর্ষ লিপ্ত হয়। ১৭৮৭ সালে মজনুশাহ মৃত্যুবরণ করলে নেতৃত্ব গ্রহণ করে মুসা শাহ, সোবান শাহ, চেরাগ আলী শাহ, করিম শাহ, মাদার বক্স সহ প্রমুখ ফকির। ১৮০০ সালে তারা চুড়ান্তভাবে পরাজিত হয় ।

অপরদিকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা ভবানী পাঠক ১৭৮৭ খ্রীঃ লেফট্যানেন্ট ব্রেনানের নেতৃত্বে একদল বৃটিশ সৈন্যের আক্রমণে দুই সহকারী নিহত হন। সন্ন্যাসীদের আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর সন্ন্যাসী আন্দোলনের অবসান ঘটে।

তিতুমীরের সংগ্রামঃ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উত্তর ভার ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যখন ওয়াহাবি আন্দোলনের জোয়ার চলছে তখন পশ্চিম বঙ্গে বারাসাত অঞ্চলে এই তিতুমীরের নেতৃত্ব প্রবল আকারে ধারণ করে। উনিশ শতকের শেষ দিকে বাংলায় দুটী ধারা প্রবাহমান ছিল একটি ওয়াহাবি বা মুহাম্মদীয়া আন্দোলন এবং অপরটি ফরায়েজি আন্দোলন নামে খ্যাত। দুটি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় সামাজিক কুসংস্কার দূর করে করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের সঠিক পথ নির্দেশ দেয়। বাংলার ওয়াহাবিরা তিতুমীরের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল।

তিতুমীর হজ্জ্ব করার জন্য মক্কা যান ফিরে আসেন ১৮২৭ সালে এবং দেশে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তার এই ধর্ম সংস্কার কাজে আত্ননিয়োগ করেন। ১৮৩১ সালে খ্রিঃ নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর তাঁর প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করেন। নির্মাণ করেন শক্তিশালী এক বাঁশেরকেল্লা। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে তোলে সুদক্ষ লাঠিয়াল বাহিনী।  শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ খ্রিঃ তিতুমীরের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার এক বিশাল সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী প্রেরণ করে। মেজর স্কটের নেতৃত্বে এই বাহিনী তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লায় আক্রমণ করে। ইংরেজ কামান বন্দুকের সামনে বীরের মত লড়াই করে তিতুমীর পরাজিত হয়। 

নীল বিদ্রোহঃ ইংরেজরা এদেশে এসেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। উপমহাদেশের শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের এদেশে শাসক হয়ে উঠে। সেই সময়ে তারা উর্বর ক্ষেতে আগ্রহী হয়ে উঠে। নীল ছিল সেই সময়ের বাণিজ্যিক ফসল। ১৭৭০ খ্রীঃ থেকে ১৭৮০ খ্রীঃ মধ্যে ইংরেজ শাসন আমলে বাংলাদেশে নীলচাষ শুরু হয়।  কৃষকদের নীল চাষের জন্য অগ্রীম অর্থ গ্রহণ বা দাদনের বাধ্য করা হত।  বাংলাদেশে নীল ব্যবসা ছিল একচেটিয়া ইংরেজ বণিকদের। ফরিদপুর, যশোর, ঢাকা, পাবনা, রাজশাহী, নদীয়া, মুর্শিদাবাদে ব্যপক নীল চাষ হত। ১৮৫৯ সালে নীল চাষীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গ্রামে-গ্রামে কৃষকরা সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ্ থাকে। যশোরে নীল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন নবীন মাধব এবং বেনী মাধব নামে দুই ভাই। হুগলীতে নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্বনাথ সর্দার ও বৈদ্যনাথ সর্দার। ১৮৬০ সালে দীনবন্ধুমিত্র মিত্রে লেখা নীলদর্পন নাটক লেখেন যা তখনকার সমাজে ব্যপক প্রভাব ফেলে।    

শেষ পর্যন্ত বাংলার সংগ্রামী কৃষকদের জয় হয়। ১৮৬১ খ্রীঃ ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের সুপারিশের উপর ভিত্তি করে নীল চাষকে কৃষকদের ইচ্ছাধীন বলে ঘোষণা হয়। তাছাড়া ইন্ডিগো কন্ট্রাক্ট বাতিল হয়। এই প্রেক্ষিতে নীল বিদ্রোহের অবসান হয়। পরবর্তী কালে নীলের বিকল্প কৃত্রিম নীল আবিস্কৃত হওয়ায় ১৮৯২ সালে এদেশে নীলচাষ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

ফরায়েজী আন্দোলনঃ ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তউল্লাহ বৃহত্তর ফরিদপুরের মাদারীপুর জেলার শাসাইল গ্রামে ১৭৮২ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করে। তিনি দীর্ঘ বিশ বছর মক্কায় অবস্থান করে। সেখানে তিনি ইসলাম ধর্মের উপর লেখাপড়া করেন। দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন যে বাংলার মুসলমানেরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে। তাদের মধ্যে অনৈসলামিক, কুসংস্কার, অনাচার প্রবেশ করেছে। তিনি ইসলাম ধর্মকে কুসংস্কার এবং অনৈসলামিক অনাচারমুক্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন।

ফরায়েজি শব্দট আরবি ফরজ (অবশ্য কর্তব্য) শব্ধ থেকে এসেছে। যারা ফ্রজ পালন করে তারাই ফারায়েজি। আর বাংলায় যারা হাজী শরীয়তউল্লাহর অনুসারী ছিলেন। হাজী শরীয়তউল্লাহ যে ফরজের উপর বিশ্বাস করতেন তা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত পাঁচটি অবশ্যপালনীয় (ফরজ) মৌলনীতি। 

জমিদার শ্রেণী নানা অজুহাতে ফরায়েজি প্রজাদের উপর অত্যাচার শুরু করলে প্রজাদের রক্ষার্থে তিনি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী করে। ১৮৩৯ খ্রীঃ তার উপর পুলিশি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৮৪০ সালে যখন হাজী শরীয়তউল্লাহ মারা যান তখন ফারায়েজি আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করেন তার যোগ্যপুত্র মুহসিনউদ্দিন আহমদ ওরফে  দুদু মিয়া।  তার জন্ম ১৮১৯ সালে। পিতার মত পন্ডিত না হলেও তার সাংগঠনিক দক্ষতা অসাধারণ। দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে নেতৃত্বে ইংরেজদের বিপক্ষে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুললে ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। ভীত ইংরেজ তাকে বন্দি করে এবং ১৮৬০ সালে তাকে মুক্তি দেয়। ১৮৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ফারায়েজী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।  

উপরের লেকচারটি সম্পূর্ণ অংশ পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করুন নিচের লিংকেঃ

-

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

লেকচার-২ (মহান মুক্তিযুদ্ধ)



অনলাইন কোর্স সম্বয়কারীঃ

পূর্বের লেকচারঃ






ইয়াহিয়া খানঃ
২৪শে মার্চ, ১৯৬৯ সালে আইয়ূব খানের গণঅভ্যুথানের পদত্যাগ করলে ২৫ শে মার্চ, ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা লাভ করেন।
League framework Order:
২৮ শে মার্চ, ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন এর ফলে ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এবং ১৭ ই ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়।
জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ফলাফলঃ
জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০০ টি আসন বন্টন করা হয় যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ১৬২ টি আসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ১৩৮ টি আসন। সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল ১৩ টি যার ৭ টি পূর্ব পাকিস্তানে এবং ৬ টি পশ্চিম পাকিস্তানে। আওয়ামীলীগ ৩০০ টি আসনের মধ্যে ১৬২ টি আসন লাভ করে এবং সংরক্ষিত আসন ৭ টি লাভ করে। আওয়ামীলীগ মোট ১৬৯ আসনে জয়লাভ করে।
১৩ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বললেন, আগামী ৩রা মার্চ অধিবেশন বসবে।
১লা মার্চ, ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া বলেন অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ।
২রা মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আ... আব্দুর রবের নেতৃত্বে প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়।  

অপারেশন সার্চ লাইটঃ
২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালী জাতির উপর পরিচালিত সাংকেতিক নাম ছিল অপারেশন সার্চ লাইট। এর উদ্দ্যেশ্য ছিল বাঙ্গালী সংগঠিত অস্ত্রধারী এবং সংগঠিত শক্তি ধ্বংস করা।
২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই অপারেশন সার্চ লাইটে স্বাক্ষর করেন। অতঃপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাত ১১ টায় / ১১:৩০ মিনিটে অভিযান চালায়। এই অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র কর্মচারী নিহত হয়। এই রাতেই শুধু ঢাকা শহরে ৬০০০ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত ১:৩০ টায় / ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ী থেকে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।  

স্বাধীনতা ঘোষণাঃ
২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ দিবাগত রাত সাড়ে বারোটা অরথাত ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ততকালীন E.P.R (East Pakistan Rifles) বর্তমান BGB (Border Guards Bangladesh) এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ নেতা জহুর আমহেদ চৌধুরীর (যার নামে চট্রগ্রাম স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়) নিকট একটি বাণী প্রেরণ করেন। বাণীটি ইংরেজীতে ছিল যাতে বিশ্ববাসী ম্যাসেজটি বুঝতে পারে। ম্যাসেজটি ছিলঃ
“This may be the Last message from today Bangladesh is Independent”


স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রঃ
২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটে সময় চৌধুরীবেলালের নেতৃত্বে চট্রগ্রাম কালুরঘাটে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল স্বাধীনবাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রপরে তা নামকরণ করা হয় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রনামে।

২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় মোহাম্মদ হান্নান (ততকালীন চট্রগ্রাম জেলার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। হান্নান সাহেবও ইংরেজীতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঐদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের সময় আবুল কাশেম সন্দ্বীপ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

পরের দিন ২৭ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। শুধু ২৭ শে মার্চ নয়, মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ শে মার্চ সহ ২৮ শে মার্চ ২৯ শে মার্চ মোট দিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

মুক্তিফৌজ গঠন / মুক্তিবাহিনী গঠনঃ
৩ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ততকালীন সিলেট জেলা (তালিয়াপাড়া) চা বাগানে (বর্তমানের হবিগঞ্জের মাধবপুরে) বঙ্গবীর M. A. G. Osmani এর নেতৃত্বে ৫০০০ সামরিক ও ৮০০০ বেসামরিক মোট ১৩০০০ সদস্য নিয়ে মুক্তিফৌজ গঠিত হয়। বাংলাদেশ ১ম সরকার গঠনের পর ১১ ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজ নাম পরিবর্তন করে মুক্তিবাহিনী নামকরণ করা হয়।
সরকার গঠনঃ
১০ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এইসরকারকে প্রবাসী সরকার বলা হয়। প্রবাসী সরকারের সদর দফতর ছিল  কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে। এই সরকার ছিল রাস্ট্রপতি শাসিত সরকার। এই সরকারের মোট সদস্য সংখ্য্যা ছিল ৬ জন।
৬ জন সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশের ১ম সরকারঃ
১) রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়কঃ শেখ মুজিবুর রহমান
২) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩) প্রধানমন্ত্রীঃ তাজউদ্দিন আহমদ
৪) পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীঃ খন্দকার মোশতাক আহমেদ
৫) অর্থ, বাণিজ্য ও শিক্ষামন্ত্রীঃ মনসুর আলী
৬) স্বরাষ্ট্র, কৃষি, ত্রাণ ও পুর্নবাসনমন্ত্রীঃ এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান

শপথ গ্রহণঃ
১৯ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ায় জেলার মেহেরপুর মহকুমা বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নে ভবের পাড়াগ্রামে (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশের ১ম সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক ইউসুফ আলী, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শপথ করান অতঃপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী সহ অন্য সকল সদস্যদেরকে শপথ পাঠ করান। আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন হয় ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল।
মুক্তিযুদ্ধ্বের কমান্ডঃ
মুক্তিযুদ্ধ্বের কমান্ড ছিল পর্যায়ক্রমে (উপর থেকে নিচে)  
১) সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান
২) সহ সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম  
৩) প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
৪) প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী
৫) (ক) চিফ অব স্টাফ (কর্ণেল আব্দুর রব) জেড ফোর্স, এস ফোর্স এবং কে ফোর্স; ১-৬ নং সেক্টর
 (খ) ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (এয়ারভাইস মারশাল একে খন্দকার)- সেক্টর বাহিনী ৭-১১ নম্বর সেক্টর
৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধ্বার পদবীঃ
সিপাহী হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল ; ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রব, নূর মোহাম্মদ;
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর; স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট- মতিউর রহমান   

মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর সমূহের বর্ণনাঃ 

সেক্টর নং
সেক্টর / এলাকা
দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার
সেক্টর ১
চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম এবং ফেনী নদী পর্যন্ত
মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল-জুন)
মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর)  
সেক্টর ২
নোয়াখালী, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব এবং ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ
মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর হায়দার (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)
সেক্টর ৩
আখাউরা ভৈরব রেললাইন হতে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ।
মেজর শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)
মেজর কাজী নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)
সেক্টর ৪
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই, শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন থেকে পূর্ব ও উত্তরদিকে সিলেট ডাইউকি সড়ক।
মেজর সি আর দত্ত
সেক্টর ৫
সিলেট জেলার পশ্চিম এলাকা এবং সিলেটের ডাইউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চল
মেজর মীর শওকত আলী
সেক্টর ৬
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর জেলা ও ঠাগুরগাঁও
উইং কমান্ডার বাশার
সেক্টর ৭
সমগ্র রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও ছাড়া দিনাজপুরের অবশিষ্ট অংশ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্র পাবনা ও বগুড়া জেলা   
মেজর কাজী নুরুজ্জামান
সেক্টর ৮
সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌলতপুর সাতক্ষিরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা  
মেজর আবু ওসমান (অক্টোবর পর্যন্ত)
মেজর এম এ মনসুর (আগস্ট ডিসেম্বর)
সেক্টর ৯
সাতক্ষিরা দৌলতপুর সড়ক সহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা
মেজর আব্দুল জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর)
এম. . মঞ্জুর (অতিরিক্ত দায়িত্ব)  
সেক্টর ১০
অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল, চট্রগ্রাম ও চালনা
মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্ত নৌ-কমান্ডার
সেক্টর ১১
কিশোরগঞ্জ ব্যতীত সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল
মেজর আবু তাহের (এপ্রিল-নভেম্বর)
ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)


** সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য
১) এজির এক নম্বর সেক্টর, জিয়াউর রহমান, রফিকুল ইসলাম
২) মটুখাহা দুইনম্বর, খালেদ মোশাররফ, হায়দার
৩) সতিনু সফিউল্লাহ, তিন নম্বর সেক্টর, নুরুজ্জামান
৪) সিচা সি আর দত্ত, চার নম্বর সেক্টর
৫) পাঁচশত পাঁচ নম্বর সেক্টর, মেজর শওকত
৬) বাছ উইং কমান্ডার বাশার, ছয় নম্বর সেক্টর
৭) সাতানু সাত নম্বর সেক্টর, কাজী নুরুজ্জামান
৮) ও-আটমন ওসমান, আটনম্বর সেক্টর, মনসুর
৯) জনম জলিল, নয় নম্বর সেক্টর, মঞ্জুর
১০) H2O – নৌবাহিনী দ্বারা চালিত, ১০ নম্বর সেক্টর
১১) এগারহাতা এগার নম্বর সেক্টর, হামিদুল্লাহ, কর্ণেল তাহের

Operation Jackpot মুক্তিযুদ্ধের সময় গুতুত্বপূর্ণ অপারেশন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বলায় হয় জনযুদ্ধ্ব কারণ জনগণ এই যুদ্ধকে সমর্থন করেছে,
১৪ই আগষ্ট, ১৯৭১ সালে মংলা পোর্ট এ ৫০ টি এবং চিটাগাং পোর্টে ১০ টি গোলাবারুদ সহ জাহাজ আসে।
৬ ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়।   

স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য খেতাবপ্রাপ্ত মোট ৬৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধ্বা  
এদের মধ্যে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ; বীরউত্তম ৬৯ জন; বীরবিক্রম ১৭৫ জন এবং বীর প্রতীক ৪২৬ জন।
সর্বশেষ বিরবিক্রম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল (মরণোত্তর)
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত দুজন মহিলা ১) তারামন বিবি (কুড়িগ্রাম), ২) সেতারা খানম (কিশোরগঞ্জ)
খেতাব প্রাপ্ত বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা ডব্লিউ. এইচ. ওডারল্যান্ড (অস্ট্রেলিয়া)
Concert for Bangladesh আয়োজন করে- জর্জ হ্যারিসন (যুক্তরাষ্ট্র) ও পন্ডিত রবি সংকর (ভারত)
প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর (৭ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১)


এই লেকচারটির সম্পূর্ণ কপি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
 লেকচার-২ (মহান মুক্তিযুদ্ধ) পিডিএফ